Tuesday, June 9, 2020

#জ্বিনের_গলি___





অশরীরী অস্তিত্বের ভয় মানুষের মধ্যে আজকাল নেই বলাটা ভুল হবে। তবে প্রযুক্তির প্রসারের হ্রাস পেয়েছে কেবল। আমার ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বহীন বলা ভুল কিছু হবে না আবার ঠিক হবে না সম্পূর্ণ রূপে। কারন নিকষ আঁধারে একা চলার সাহস এবং রোজকার জীবনে সে বাস্তবতা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ঝকঝকে আলোর মাঝেও হঠাৎ ঘাড়ের কাছে কারো নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাওয়ার অনুভূতি ।এটা আসলে হ্যালোসিনেশন নাকি বাস্তবতা জানি না, আর জানতেও চাইনা। কারণ কিছু বিষয় অজানা থাকলেই জীবনটা অনেক বেশি উপভোগ্য হয় । এমন অজানা জগতে থাকার প্রয়াস কম ভাড়ায় পাওয়ার লোভ থেকেই আমি এই বাসাটিতে শুরু করি। তিন তলা বাসার তৃতীয় তলায় উত্তর দিকের ফ্লাট টা আমার। এটা বাসার পশ্চাৎ পার্শ্ব। প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট । সম্মুখ পার্শ্ব অর্থাৎ দক্ষিণ দিকের প্রতি তলায়ই পরিবার থাকে তবে উত্তর দিকের নিচতলা, দোতালায় গোডাউন। কারণ উত্তরের বারান্দার ঠিক সামনের গলিটাই জ্বিনের গলি। মানে সকলের কাছে ঐ নামে পরিচিত । ওখানে মাঝে মাঝে নাকি মৃত কুকুর, বিড়াল আর দু-একবার মানুষও গিয়েছে গিয়েছে । তাই এই গলির সাথে সংযুক্ত বিল্ডিং তিনটির এই দিকটায় কেউ ভাড়া থাকে না। আর গলি দিকে সবগুলো বাসার পশ্চাৎ দিকেই ফেলা হয়েছে যাতে যাতায়াতের ব্যবহার করতে না হয়। সবার ভয় - আতঙ্ক আর উপেক্ষায় জ্বিনের কার্যকলাপ বেশ বাধাহীন ভাবেই চলছিল।
এদিকে মাত্র ৩ হাজার টাকায় প্রায় ১৯০০ বর্গফুট এর একটি বাসায় লোভে আমার মনে কোন ভয় কাজ করেনি । আমার মাঝে যা কাজ করছিল তা হলো কর্মসূত্রে আসা নতুন জায়গা সম্পর্কে অজ্ঞতা আর টাকা বাঁচানোর লোভ। বাসায় আমার দিন বেশ ভালই চলছিল। প্রথম দু'দিন গভীর রাতের দিকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ-এ বিরক্ত লাগলেও খুব দ্রুতই সয়ে যায়। আসলে প্রায় সব পরিবেশেই খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারা আমার একটা বড় দোষ । যদিও অনেকের কাছে এটা খুব প্রশংসনীয় গুণ।
সেদিন এ বাসায় আমার ১৮ তম দিন ছিল। ঐ তারিখের সাথে খুব কাছর অার আপন কিছু স্মৃতি জড়ানো আমার। এসবই ভাবতে ভাবতে আর ঘুম আসছিল না। তাই বাসার সব লাইট বন্ধ করে একটা কফির মগ নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পূবের বাতাসে বারবার এলো হয়ে যাওয়া চুল ঠিক করছিলাম আর আমার লাভ বার্ডস গুলোর কর্মকাণ্ড দেখেছিলাম । তখন রাত পৌনে দুইটা কি আড়াইটা হবে। হঠাৎ একটা গোঙ্গানির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমার মনের ভুল ভেবে গুরুত্ব দিইনি। আওয়াজটা আবার শুনতে পেলাম। দ্বিতীয় বার আর মনের ভুল বলে মনকে বোঝাতে পারলাম না । আধুনিকতার প্রারম্ভে তৈরি মফস্বলের এই বাড়িটির বিশাল বারান্দার এপাশ-ওপাশে বারবার অস্থির হয়ে খুজছিলাম, কিসের আওয়াজ! বারবার মনে হচ্ছিল আওয়াজটা কোন মানুষের। বেশ কয়েক মিনিট খোঁজার পর আমার রুমের জানালা বরাবর দুই বিল্ডিং এর মধ্যবর্তী সরু ময়লা ভরা ৩ ফিট প্রস্থের গলিটায় ৩জনকে দেখলাম । জনের পরনেই গেঞ্জি প্যান্ট। আসলে ছিল বলব কারণ আমি যখন দেখেছি তখন সেগুলো প্রায় থাকার মতই দেহে পাশে আর নিচে পড়ে ছিল। মফস্বল হলেও রোডলাইটের আলো শহরের মতই সারারাত জ্বলে। আর অন্ধকার স্থান হলেও এতোটুকু আলো ছিল যে তাদের আকৃতি দেখে দুজন মেয়ে আর একজন ছেলে হিসেবে তাদের চিনতে এবং তাদের কর্মকান্ড বুঝতে খুব কষ্ট হয়নি। তাদের কর্মকান্ড, অর্থাৎ মেয়ে দুটির জোরপূর্বক ছেলেটির সঙ্গ লাভের প্রচেষ্টা; এক্ষেত্রে লিঙ্গ যদি বিপরীত হতো তাহলে হয়তো মেনে নিতে সমস্যা হতো না কারন আমাদের সমাজের রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঔটা। কিন্তু এক্ষেত্রে... ... আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েও বুঝতে পারি যে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। সেই মুহূর্তে আমার করণীয় বুঝতে পারছিলাম না। কোন কিছুই না ভেবেই একটা পাখি খাঁচা থেকে খুব সাবধানে বের করলাম যাতে পাখিদের ডাকাডাকি শুনে ওরা কিছু বুঝতে পেরে না যায়। হাত দিয়েই পাখিটির ঘাড় ছিড়ে ফেললাম। উপরের দিকে একটু চামড়া লাগিয়ে রাখলাম যাতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়। এমনকি ঠোঁট টা চেপে ধরে রেখেছিলাম যাতে শব্দ না হয়। ফেলে দিলাম ওদের উপর তাক করে । পাখি ছোট হলেও হাত-মুখ বাঁধা ময়লার ওপর শোয়া ছেলেটির মাথার সামনের দিকে বসা মেয়েটার উরুর ওপর পড়ায় ভিজে যায় মেয়েটার উরু। মেয়ে দুটি একে অপরের দিকে তাকায় ছেলেদের নিরুপায় দেহের ওপর থাকা মেয়েটি পাখিটি ধরেই চিৎকার দেয়।তারা উপরের দিকে তাকায় তবে সব জানালা লাগানো আর অন্ধকার দেখে ভয় পেয়ে যায় । তারা আবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে রকম ভাবে দেহাবরণ ধারন করল কি করল না, পলায়ন করে। তাদের প্রস্থান করতেই আমি ছেলেটির কাছে যাই । তাকে বাসায় আসতে বলাতেই সে কোনোরকম ভাবে দাঁড়ায়। তাকে নিয়ে বাসায় আসি।আমি বাসায় একা থাকলেও অতিরিক্ত বিছানা-পত্র ছিল। তাকে বাথরুম দেখিয়ে একটা তোয়ালে আর বিছানাপত্র দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
:পাখিটি দেখে তুমি ভয় পেলে না যে!
:পাখিটা ওদের থেকে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলনা।
:ডাইনিং এ কিছু খাবার দিচ্ছি, ইচ্ছে হলে খেও আর ড্রয়িং-এ বিছানা করে শুয়ে পরো। আমার ঘুম পাচ্ছে খুব। আসছি।
বলেই আমি আমার রুমে চলে গেলাম। দরজাটা লক করব কিনা ভাবতে লাগলাম। কারন একজন অপরিচিত পুরুষ ছেলেটি। আবার সে নিজেই তো এক শিকার, সে কিভাবে শিকারি হবে... ... বারান্দায় বসে এসব ভাবতে ভাবতেই ভোরের আলো ফুটে গেল। লক্ষ্য করলাম দিনের আলোতে জ্বিনের গুলির এক আলাদা সৌন্দর্য রয়েছে। এলাকার মানুষের কাছে রাস্তাটা পতিত হলেও এতে খুব বেশি ঘাস জঙ্গল না হওয়ার কারণ হয়তো গত রাতের মত নিশাচরদের আনাগোনা।
আমিবআর ভাবতে পারছিলাম না। ঘরে এসে দেখি ছেলেটা চাদর মুড়ে শুয়ে আছে । আমি চা বানালাম আর বাটিতে মুড়ি এনে বললাম,
: আমার সকালের নাস্তা এই চা-মুড়ি , খাওয়ার হলে এসো।
: হ্যাঁ?
ছেলেটি উঠে আমার দিকে তাকালো। আসলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই বড়দের তুমি আর সমবয়সী ও ছোটদের তুই বলা আমার স্বভাব। ছেলেটি কোন কথা না বলে এসে টেবিলে বসলো । আমিও কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। খেতে খেতে বললাম,
:৯শো টাকা দিয়ে যেও যাওয়ার আগে। কারণ একটা পাখি কিনলে জোড় নাও মিলতে পারে তাই জোড়াই কিনতে হবে।
ছেলেটি ঠোঁট থেকে চায়ের কাপ নামাতে নামাতে তাকিয়ে রইল ।


Post a Comment

Whatsapp Button works on Mobile Device only

Start typing and press Enter to search